জীবনের উদেশ্য খুঁজে বেড়াই? পার্ট ৫
জীবনটা কিসের মত?
উত্তর খুজতে গিয়ে গুগলে সার্চ দিলাম
“Life is like……” দিয়ে
বাকিটা ইতিহাস
মোট ৮ বিলিয়ন উত্তর আসলো, মাত্র!!!
নানা মুনির নানা মত,
কেউ বলছেন, লাইফ একটি বই, কিছু চেপ্টার দুঃখ, কিছু চেপ্টার সুখ আর কিছু চেপ্টার রমাঞ্ছকর, পাতা না উলটান পর্যন্ত জানা যায় না আগে কি আছে
কেউ বলছে লাইফ হল একটি নাছোড়বান্দা শিক্ষক
কেউ বলছে লাইফ হল পরবত স্রিঙ্গ, যা চড়তে কঠিন তবে চড়ে গেলে সুন্দর দৃশ্য
কেউ কেউ আবার বলছেন লাইফটা হল এক কাপ গরম চা, একটা পিয়ানও, একটা সারকাস, একটা পাজল, অথবা নাকি ৭ গিয়ারের এক রেসিং সাইকেল, যার সপ্তম গিয়ার কখনই ইউস করা হয় না!
তাই প্রশ্ন,
আপনার কাছে লাইফ টা কি?
একটু চিন্তা করুন,
প্রশ্নটা ইম্পরট্যান্ট, কারন আপনার অবচেতন মন লাইফ কে যেই সংজ্ঞা দিবে সেটাই হবে আপানর ভিত্তি।
এই অবেক্ত সংজ্ঞাই আপনাকে ড্রাইভ করছে, নিরনয় করছে আপনার প্রায়রিটি, আপনার মূল্যবোধ।
যেমন
আপনার কাছে লাইফের ডেফিনেশন যদি পার্টি হয়ে থাকে তাহলে আপনারও প্রাওরিটি হবে ফান। যদি ডেফিনেশন একটা রেইস হয়ে থাকে তাহলে আপনার প্রাওরিটি হবে স্পিড আর যদি একটি গেইম হয় তাহলে আপনার প্রাওরিটি হবে শুধু উইনিনিং
এত সংজ্ঞার ভিরে সঠিক সংজ্ঞাটা যে কি হবে, বোধহয় তিনিই দিতে পারেন যিনি আমাদের বানিয়েছেন
তাই তাঁর অভিধান ঘাটা শুরু করলাম, পেলাম মোট তিনটি সংজ্ঞা!
প্রথম সংজ্ঞা
লাইফ হল একটা টেস্ট [১]
বিভিন্ন এক্সামপ্ল দিয়েছেন ,
যেমন
ইব্রাহিম কে টেস্ট করা হয়েছে আগুনে ফেলে এবং ছেলেকে কুরবানির ইন্সট্রাকশন দিয়ে, ইয়াকুব কে টেস্ট করা হয়েছে অন্ধত দিয়ে, ইয়ুসুফ কে টেস্ট করা হয়েছে টেমটেশন দিয়ে, আইয়ুব কে টেস্ট করা হয়েছে রোগ দিয়ে, দাউদ কে টেস্ট করা হয়েছে জটিল কেস দিয়ে!
আমরাও প্রতি নিয়ত কোন না কোন টেস্টের সম্মক্ষিন হচ্ছি, এবং সেই টেস্টে কি ভাবে রেস্পন্ড করছি তা তিনি নোট রাখছেন।
বিশেষ করে, আমরা যখন তাঁর প্রেসেন্স ফিল না করি অথবা মনে করি তিনি আমাদের দুয়া শুনছেন না ঠিক সেই মুহূর্ত গুলো!প্রতিটি মুহুরতে তিনি আমাদের রেস্পন্স অবসারভ করছেন
তাঁর টেস্ট গুলো কি রকম হতে পারে তা আমরা কিছুটা আঁচ করতে পারি, বিষয়গুলো তিনিই জানিয়ে দিয়েছেন, যেমন ডিরেক্টলি বলেছেন
আমাদেরকে অবশ্যই টেস্ট করা হবে ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসলের ক্ষতি দিয়ে [২] আর টেস্ট করা হবে টাকা পয়সা ও সন্তানাদি দিয়ে [৩]
আবার ইনডিরেক্টলি বলেছেন
আমাদের টেস্ট করা হবে কিছু মেজর চেঞ্জ দিয়ে, বিলম্বিত প্রতিশ্রুতির মাধমে, মাঝে মাঝে ইম্পসিবল প্রবলেম দিয়ে, উত্তরবিহিন দুয়া দিয়ে, অযাচিত ইন্সাল্ট দিয়ে অথবা অনাকাঙ্খিত শোক দিয়ে
ইন্টেরেস্টিংলি, এই টেস্ট শব্দের ক্ষেত্রে তিনি আরবিতে ফা-তা-না শব্দটি ব্যাবহার করেছেন। আরবরা এই শব্দিটি সাধারণত স্বর্ণ থেকে ময়লা দূর করার ক্ষেত্রে ব্যাবহার করে থাকে, মানে, তিনি বলেই ফেললেন আমরা তাঁর কাছে স্বর্ণের মতই মূল্যবান!
খেয়াল করুন,
যখন ইয়ুনুস অধইরজ হয়ে রাগ করে রওনা দিলেন, তখনই তিনি তাঁকে মাছের পেটের এক্সপেরিএন্স টেস্ট করালেন, বিষয়টা শাস্তি ছিল না বরং তাঁর ডেভেলপমেন্ট জন্য একটা ছোট্ট টেস্ট ছিল
তবে সুখবর হল,
তিনি চান আমারা যেন এই টেস্ট গুলতে পাশ করি। তিনি প্রমিস করছেন যে তিনি কখনই এমন কোন টেস্ট চাপিয়ে দিবেন নে যা আমাদের সাদ্ধের বাইরে [৪]
আরও সুখবর হল যে আপনার কোন টেস্ট এর কষ্টই ব্রিথা যাবে না
সামান্য একটা কাটা ফুটার কষ্টের বিনিময়েও আপনার একাউন্টে রিওারড পয়েন্ট জমা হতে থাকবে [৫]
তাই বলছি,
লাইফকে একটা টেস্ট হিশেবে ট্রিট করুন, দেখবেন কোন কিছুই আর ভিত্তিহিন বা অমুলুক লাগছে না, প্রতিটি ঘটনাই ইম্পরটেন্ট, প্রতিটি দিনই অরথবহ এবং প্রতিটি মুহুরতই লাগবে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেনট এর একেকটি অপ্পরটুনিটি!
এবার আসি দ্বিতীয় সংজ্ঞায়
লাইফ হল একটা টেম্পোরারি লোণ
পৃথিবীতে আমাদের সময়, এনারজি এবং রিসোর্স যা আছে সবই তাঁর [৬], আমাদের কেবল কিছু দিনের জন্য ধাঁর দেয়া হয়েছে।
এই ক্ষণিকের বিরতি পথে কোন কিছুই আমাদের না। আমরা চলে গেলে অন্য কাউকে এই সার্ভিস এঞ্জয় করতে দেয়া হবে। যে কোন মুহূর্তে তিনি তাঁর জিনিস ফেরত চাইতে পারেন এবং চাহিবা মাত্র আমরা দিতে বাধিত থাকিব
তবে যতদিন আমরা তা ব্যাবহার করব ততদিন আমাদের সেগুলোকে রেস্পন্সিবিলিটির সাথে ব্যাবহার করতে হবে
ভেকেশনে গেলে আমরা কি করি?
ঝক ঝকে মেঝে, বাহারি বাথ্রম আর তুলতুলে বিছানা এঞ্জয় করি। আমরা জানি এটা হোটেল কত্রিপক্ষের, তাই সব কিছুই যত্ন ও সাবধানে ব্যাবহার করি। জানি, জিনিস ভাঙ্গা গেলে কত্রিপক্ষকে জবাব্দিহি দিতে হবে।
বিআরটিসি বাস গুলা তে উঠলে দেখা যায় কি যাচ্ছে তা অবস্থা, এটিচুড হল, জিনিস তো সরকারের, নষ্ট হলে আমার কি?
অথচ আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গিটা হওয়া উচিত ছিল, যেহেতু সব কিছুই তাঁর তাই প্রতিটি জিনিসের ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরও এক্সট্রা কেয়ারিং হতে হবে
আমাদের প্রতিটি একশনের জন্যেও তাঁকে জবাদিহি দিতে হবে [৭]
আমাদের কে আশ্বাস দিতে হবে, যে আমরা রেস্পন্সিবল, আমাদের উপর তিনি ভরসা করতে পারেন
কারন
এই সামান্য পার্থিব প্রাচুর্য দিয়ে যদি আমাদেরকে দায়িত্ব অরপিত না করতে পারেন তাহলে জান্নাতের অসীম প্রাচুর্য দিয়ে আমাদের উপর ভরসা করবেন কি করে?
এবার আসি শেষ সংজ্ঞায়
লাইফ হল একটা টেম্পোরারি জার্নি [৮]
কুরআনে তিনি অনেক অনেক ভাবে বুঝুইয়েছেন যে এই লাইফ খুবি টেম্পোরারি, খুবি সংক্ষিপ্ত, বিদেশ ভুমির মত এক অস্থায়ি কেম্প। আমরা কেবল কয়েকদিনের টুরিস্ট মাত্র
দেশের বাইরে যারা থাকেন, অনেককেই দেখেছি দেশের মায়ায় দেশি পাসপোর্ট হাতছারা করেন না, দেশি সিটিজেনশিপ কেন্সেল করেন না। কাজ করার জন্য গ্রীন কার্ড ব্যাবহার করেন।
আমরাও এই পৃথিবীর গ্রীন কার্ড হলডার আর আমাদের পার্মানেন্ট সিটিযেনশিপ হল ওখানে, সেটাই আমাদের হোমল্যান্ড
আপনাকে যদি কোন দেশের এম্বেসসেডার হিসেবে পাঠানো হয়, তখন আপনি কি করেন?
সেই দেশের ভাসা শিখেন, তাদের কালচার শিখেন যাতে আপনার কাজ সহজ হয়। এখন আপনি যদি , সেই দেশের প্রেমে পরে নিজের মাতৃভুমিকে ভুলে সেই দেশকেই প্রাধান্য দেয়া স্টার্ট করেন তাহলে আপনি তো দেশদ্রহি হয়ে গেলেন! তাই না?
আমাদের কে তিনি এখানে এম্বেসসেডার হিসেবেই পাঠিয়েছেন [৯]
মনমুগ্ধকর এন্টারটেইন্মেন্ট আর বিলাশিতায় আমরা ভুলতে বসেছি যে এটা কোন ডিস্নিলেন্ড না, জাস্ট এমএসেডার হিসেবে একটা টেস্ট দিতে এসেছি
পৃথিবীটা যেহেতু আমাদের চিরস্তান নয় তাই তিনি প্রায় সময়ই আমাদের দুঃখ, দুরদশা দিয়ে মনে করিয়ে দেন যে এখানে সব চাহিদা পুরন হওয়ার নয়। প্রকৃত সুখ শান্তি আর ফ্যান্টাসি তো পরকালের জন্য উঠিয়ে রেখেছেন!
এখানে আমাদের সময় একদিন শেষ হয়ে যেতে পারে তবে তাঁর মানে এই নয় যে আমাদের গল্প এখানেই শেষ
মৃত্যু মানেই প্রস্থান নয়, এতো কেবল বাড়ির দিকে ফিরে চলা।
আমরা সবাই টুরিস্ট, ঘুরার পাশাপাশি কিছু সারটিফিকেশন টেস্ট দিতে এসেছি মাত্র
সময় হলে বাড়ি ফিরবো।
সেদিন যখন উঠান হবে সবাই সমস্বরে বলে উঠব:
“আরে! সেই টুরিস্ট স্পটে তোঁ মাত্র কয়েক ঘন্টাইত আমরা ছিলাম, এর জন্য এত এনেরজি, এত সময়, এত ব্যস্ততা!” [১০]
রেফেরেন্সঃ
[১] কুরআন ৬৭ঃ২
[২] কুরআন ২ঃ১৫৫
[৩] কুরআন ৬৪ঃ১৫
[৪] কুরআন ২ঃ:২৮৫
[৫] [ সহি বুখারি ৫৩১৭, সহি মুস্লিম ২৫৭২]
[৬] কুরআন ৪৩ঃ৮৫
[৭] তিরমিজি ২৪১৬
[৮] কুরআন ১৩ঃ২৬ ]
[৯] কুরআন২:৩০
[১০] কুরআন ১০ঃ৪৫
Leave a Comment