অনেক তো হয়েছে এবার নাফসের লাগামটা টেনে ধরুন!

হজরত ইউসুফ এর একটা ডায়লগ মনে বড় আশা সঞ্চার করে
“আমি তো নিজেকে দোষমুক্ত মনে করি না”
নফস্ তো মন্দ কাজে প্ররোচিত করতেই থাকে” [১২:৫৩]
স্মার্ট ফোনের যুগে নাফ্স এর ছোট্ট একটা ইশারায় যেখানে আসক্ত
তখন মনে হয়
“আমিও তো নিজেকে দোষমুক্ত মনে করি না”
আমার নফস্ও তো মন্দ কাজে প্ররোচিত করতেই থাকে”
যেখানে আল্লাহর নবি নাফসের উসকানি থেকে মুক্ত পায়নি
আমি কোথাকার কে?
তবে এর মানে এই নয় যে
এই দোহাই দিয়ে দিনের পর দিন উসকানিতে সাড়া দিতেই হবে
পালা এবার লাগাম টানার
একটু খেয়াল করে দেখুন
নাফ্সের উসকানি গুলোর কিন্তু একটা পেটার্ন আছে
যেমন বাসার সবাই বেড়াতে গেলো
আপনি দরজা বন্ধ করলেন
সাথে সাথে একটা সাজেশন আসলো
কিংবা একটা ক্লিপ দেখলেন
সেই ক্লিপের এমন একটা সিন্ আসলো
সেটা দেখে আরেকটা সাজেশন আসলো
কিংবা একটা মুভি চলছে
হঠাৎ একটা রগরগে দৃশ্য
সাথে সাথে আরেকটা সাজেশন
বাস! ফোন উঠিয়ে সার্চ
শুরু হয়ে গেলো উনমাদনা
কোনদিক দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চলে গেলো খেয়ালই নেই
তারপর একটা অপরাধ বোধ নিয়ে ঘুম থেকে উঠা
সাইকোলজিতে এই ইভেন্ট গুলোকে ট্রিগার পয়েন্ট বলে
অর্থাৎ সেই সব ইন্সিডেন্ট গুলো যা আপনাকে অন্য অ্যাকশন নিতে প্রম্পট করে
এমন একশন যা সিরিজ অফ ডিসেপইন্টমেন্ট তৈরী করে
তৈরী করে চাপ
তৈরী করে অপরাধবোধ
তৈরী করে মেন্টাল চেটার
যেমনঃ
“সিট! কেন করলাম আবার!”
“এই বুঝি একটা অঘটন ঘটল”
“এই বুঝি একটা দুঃসংবাদ পাবো”
“এই বুঝি কেউ বুঝে ফেলবে”
আর যদি কেউ জিজ্ঞেস করেই বসে
কি হয়েছে?
মুখটা শুকনা লাগছে কেন?
শক্তি সঞ্চয় করে মিথ্যা বলা
“না না! সব ঠিক আছে”
এনার্জেটিক ফিল করছি!
রাতের ডিভাইস বেসড এই অপরাধ গুলো আমাদের শুধু স্পিরিচুয়ালি ডিস্টার্ব করে না
ডিস্টার্ব করে মেন্টালিও
কারন বিষয়টি এক্সট্রিমলি এড্ডিক্টিভ
এতে ব্রেইনের একটা বিশেষ হরমন ট্রিগার হয়
যার নাম “ডোপামিন”
ডোপামিন হলো প্লেসার ড্রাগ
আমাদের ব্রেইনে এই ডোপামিনের ৫ ধরনের রিসেপ্টারস বা থলি আছে
একেক থলির একেক ধরনের প্লেসার সেনসেশন রিলিস করে
সমস্যা হলো এই থলি গুলিতে যখনই ডোপামিন আসে
এদের সাইজ বাড়তে থাকে
অর্থাৎ নেক্সট টাইম
ওই থলি ভরতে হলে আরো বেশি ডোজের ডোমপামিন প্রয়োজন
তাই তো দেখবেন
এক পরযায়ে স্বল্প রগরগে দৃশ্য তে আর পোষাচ্ছে না
পরিধি বারাতে হচ্ছে
বিষয়টির ভয়াবহতা বুঝাতে নির্দেশ এসেছে
“তোমরা অশ্লিলতার ধারে কাছেও যেয়ো না,
নিশ্চয় তা এক জঘন্য পথ” [কোরান ১৭ঃ৩২]
খেয়াল করুন
নির্দেশটিতে দুটো বিষয় আছে
এক, তিনি বলেন নি অশ্লীলতা করো না
বলেছেন
এর ধারে কাছেও যেও না
ইনডিকেটিনং যে এর একটা বলয় আছে
যেই বলয়ের কাছেও যাওয়া যাবে না
কারন এই বলয়ের নিজেসস একটা শক্তি আছে
সেথায় পরলে সহজে বের হওয়া যায় না
আর দ্বিতীয় বিষয় হলো ‘পথ’
এটা একটা জঘন্য পথ
পথ কিসে হয়?
ছোট ছোট স্টেপসে
যার স্টারটিং পয়েন্ট আছে কিন্তু কোন এন্ডিং পয়েন্ট নেই
যা আপনাকে বহুদূর নিয়ে যেতে পারে
এবং যেখান থেকে ব্যাক করা টা অনেক ডিফিকালট
নাফসের বিষয়ে হাদিসে এসেছে যে
আমাদের কারিন প্রতিনিয়ত আমাদেরকে আইডিয়া থ্রো করে থাকে
যখনি আমরা কোন একটা আইডিয়াতে এক্ট করি
আমরা তখন তাকে একটু করে ক্ষমতা অর্পণ করি
এবং নেক্সট টাইম
সে যখন একই আইডিয়া সাজেস্ট করে
তখন সেটা ইগ্নর করা কঠিন তর হয়ে পরে
একটা পর্যায়ে সে এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠে যে
এট টাইমস
সে আমাদেরকে কমেন্ড করতে থাকে অশ্লিলতার জন্য [কোরান ২:২৬৮]
এবং আমরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেটা করতে থাকি
এক সময় গিয়ে সেটা একটা হেবিটে টার্ন নেয়
নিজেদের তখন বারবার কষতে ইচ্ছে করে
“কেন করলাম?” “কেন করলাম?” বলে
প্রশ্নঃ এই বলয় থেকে কি বের হওয়া সম্ভব?
সম্ভব!
সাধারণত দেখা যায়
বড় কোনো একটা ধাক্কা
কিংবা একটা বিপদে
কিংবা প্রচণ্ড একটা ইচ্ছে শক্তি
আপনাকে সেখানে থেকে ফিরতে সাহায্য করে
তবে মনে শঙ্কা থেকেই যায়
যদি আবার সেই বলয়ে পা পিছলে পরে?
কারন নেক্সট ট্রিগার আসবেই আসবে
এটা অবধারিত
কারিন নাছর বান্দা
প্রশ্ন হলো নিজেকে তাহলে প্রটেক্ট করবেন কি করে?
প্রটেক্ট করতে হলে সবার আগে যেটা মাস্টার করতে হবে
সেটা হোল
“মাইন্ডফুলনেস”
আপনাকে মাইন্ডফুল হতে হবে
মাইন্ডফুলনেসের দুটো পার্ট
প্রথম পার্ট হলো অবসার্ভেশন
অবসার্ভ করতে হবে যে
এই মুহূর্তে আপনি কি চিন্তা করছেন
প্রেকটিস করতে হবে একটা ডেইলি এক্সেরসাইস
প্রতিদিন নিজেকে একটিভলি প্রশ্ন করুন
“এই মুহূর্তে আমি কি চিন্তা করছি?”
অথবা
“আমার নেক্সট চিন্তাটি কি?”
এটা রেগুলার প্র্যাকটিস করলে দেখবেন একটা সময় পরে আপনি সাজেশন গুলো কে আইডেন্টিফাই করতে পারছেন
দ্বিতীয় পার্ট হোল ‘রিয়ালসাইজেশন’
রিয়ালসাইজেশন যে
“একজন সব কিছু দেখছেন!”
রিয়ালসাইজেশন বাড়ানোরও এক্সেরসাইস আছে
আর তা হলো রোজা
খেয়াল করুন
রোজা রেখে আপনি কিন্তু কিছু খান না
কারণ রেয়ালাইসেশন যে
“একজন সব কিছু দেখছেন!”
এই দুটো পার্টের একটা সুন্দর টার্ম আছে
টার্মটা হলো তাকওয়া!
আর যিনি সব সময় এ তাকওয়া স্টেটে থাকা মাস্টার করতে পারে
তাকে বলা হয় মুত্তাকি!
মাইন্ডফুলনেসের পর যেটা করতে হবে
সেটা হোল কেলকুলেশন
বিষেস করে শর্ট টার্ম কেলকুলেশন
কারন যদিও আমরা আখিরাতে বিস্বাস করি তবুও
শর্ট টার্ম গোল গুলোই আমাদের কে বেশি ড্রাইভ করে
যেমন
নেক্সট প্রমোশন
নেক্সট ইঙ্ক্রিমেন্ট
নেক্সট এপ্রিসিয়েশন ইত্যাদি ইত্যাদি.
একটু করিলেশন করলেই দেখতে পাবেন যে
যখনি আপনি ল্লম্বা সময় ধরে অশ্লীলতায় এঙ্গেজ হয়েছেন
তখনি আপনার চাকরি জীবনে, দাম্পত্য জীবনে, সুস্থতায় কিংবা আপনার বস্তুগত বিষয়ে বরকত কমে গিয়েছে
কেন?
কারন
অশ্লীলতা আমাদের চারটা পার্টকে একসাথে এটাক করে
মাইন্ড
বডি
হার্ট এন্ড
সৌল
মাইন্ডর ক্ষেত্রেঃ
সে আপনার চিন্তা শক্তিকে ঘোলাটে করে তুলে
সেজদায় গিয়ে আর আল্লাহর আরশ কল্পনাতে ভাসে না
ভাসে অন্য কিছু
অর্থাৎ আপনার ভিসুয়ালিজাসন পাওয়ার মেস্ট আপ করে ফেলে
হার্টের ক্ষেত্রেঃ
সে আস্তে আস্তে হার্টে স্পট ফেলতে থাকে
টিল এটা এতোটাই কুলোষিত হয়ে পরে যে
আপনি আর গিল্ট নামক গিফট টি ফিল করেন না
এটা আপনার রিলেসনশিপেও ইম্পেক্সট আনে
কাছের মানুষটাকে তখন আর রঙিন মনে হয় না
মোস্ট ইম্পোর্টেন্টলি
যেহেতু আপনি ইন্টার্নালি ডিস্টার্বড থাকেন
তখন আপনার টলারেন্স লিমিটটা অনেক কমে যায়
এস এ রেসাল্ট
পান থেকে চুন খসতেই আপনি ছেত ছেত করতে থাকেন
ফলে দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠে তিক্তময়
স্পিরিচুয়ালিটির ক্ষেত্রেঃ
ডেডলি চিন্তা আপনাকে পেয়ে বসে
আপনার চিন্তা চেতনা একজন ভিকটিমের মতো হয়ে উঠে
যেমন
“এই বুঝি আমার সাথে একটা খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে”
“এই বুঝি একটা সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে”
“আমার রব আমার উপর নারাজ”
“উনার রহমত আমার উপর নেই”
অর্থাৎ অবচেতন ভাবে আপনি নিকের জন্য নেগেটিভ দুআ করা স্টার্ট করেন
প্লাস নিজেকে আন ওয়রদি মনে করতে থাকেন
ফলে হাদিসের কুদসীর কথা ফলতে থাকে
“আমার বান্দা আমাকে যেমনটা ভাববে,
আমাকে তেমনটাই পাবে”
যেহেতু আপানি ভাবছেন
“আমার রব আমার উপর নারাজ”
তাই ধীরে ধীরে দেখবেন আপনার রিয়ালিটিও তেমন ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে
আপনার গুড লাক চার্ম হারিয়ে ফেলছেন
একের পর এক খারাপ নিউস পেতে থাকছেন
এ যেন এক ডেডলি স্পাইরাল!
আর বডির ক্ষেত্রে?
এক রিসারচে পরেছিলাম
গিল্ট আমাদের বডিতে একটা টক্সিক পদার্থ রিলিস করে
যা ইমিউনের জন্য খুবই ক্ষতি কারক
তাই সে নানান ব্যাধি এট্ট্রাক্ট করতে থাকে
তাইতো দেখবেন
অশ্লিলতার কারণে আপনার স্কিন রাফ হওয়া শুরু হয়
আপনার প্রেশার বেড়ে যায়
আপনার হার্টের সিম্পতম দেখা দেয়
আপনি উদ্দাম হারিয়ে ফেলেন
আস্তে আস্তে আপনার জীবন শক্তি কমে যায়
তবে প্রশ্ন আসতেই পারে যে
কই?
কত শত মানুষ কত শত খারাপ করে বেড়াচ্ছে
কই তাদের তো এরকম কোনো পেরেশানিই হয় না
আমার ক্ষেত্রেই কেন এমনটা হচ্ছে?
হয় না পলিসিগত কারনে
একটা হচ্ছে গুড বয় পলিসি
আরেকটা হচ্ছে বেড বয় পলিসি
উপরের কথা বার্তা গুলো কেবল গুড বয় এর জন্য বর্তায়
বেড বয় পলিসি হলো
“আল্লাহ ছাড় দিয়ে রেখেছেন
যেদিন ধরবে সেদিন খবর আছে”
এবং আমলের উপর ডিপেন্ড করবে দুনিয়াতেই ধরবেন
নাকি পরের জন্য উঠায় রাখবেন
আপনার যদি এই মুহূর্তে খারাপ টাইম যাচ্ছে
তাহলে খুশি থাকেন
কারণ আপনি ভাগ্যবান
আপনি এখনো গুড বয় পলিসির আওতায় অন্তর্ভুক্ত
তাড়াতাড়ি পাপ গুলোর কথা মনে করে মাফ চাইতে থাকেন
জেনুইন মাফ
পসিবল হলে চোখের পানি ফেলে প্রমিস করেন যে
এই কাজ জীবনেও করবেন না
ডোপামিনের আরেকটা দিক বলে রাখা দরকার
ডোপামিন আস্তে আস্তে আপনাকে প্রচণ্ড সেলফ সেন্টারড বানিয়ে তুলে
কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হবে না
ফিলিস্তিনে হাজার হাজার শিশু মারা পরলেও আপনাকে নাড়া দিবে না
ভয়েস রেইস করতে ইচ্ছে হবে না
কেননা আপনি তখন আপন ভুবনে বুঁদ
সো নেক্সট টাইম অশ্লীল কিছু করার আগে
একটা ইনফরমড ডিসিশন নিয়ে আগাবেন
কেবল মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার সাময়িক মজার জন্য এত কিছু সেক্রিফাইস করাটা কি ওয়ার্থ হোয়াইল হবে?
পাশাপাশি মাথায় রাখবেন
স্রষ্টার কোন আইনই অহেতুক নয়
এগুলো এস্টাব্লিশ করা হয়েছে যেন
আমাদের ওয়েল বিং এবং
সোসাইটির ওয়েল বিং যেন ঠিকঠাক ভাবে ফাংশনাল থাকে
প্রশ্ন আসে
আমিতো কেবল আপন ভুবনে বুঁদ হয়ে আছি
সোসাইটির তো কোনো ক্ষত করছি না!
করছেন!
কারন তিনি প্রতিটি আদম সন্তানকে সম্মানিত করে পাঠিয়েছেন
আপনি যখন আসক্ত হয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েটার দিকে তাকান
সেই তাকানতে সম্মান থাকে না
থাকে লালসা
তাকে আর মানুষ মনে হয় না আপনার
মনে হয় একটা মাংসের দোলা
যার কারনে আপনার নেক্সট স্টেট হয় সর্বনাশা
খুব শম্ভবত এই কারণেই
অশ্লীলতার পরব্রতী আয়াতই হলো
তোমরা হত্যা করো না
বুঝিয়েছেন
অশ্লিলতা, মানুষ হত্যা থেকেও ঘৃন্য
এখন বলতে পারেন
ভাই অনেক ট্রাই করেছি
কোনোভাবে মাস দেড় এক যায়
আবার সেটা ফিরে আসে
আর আসলেই এক সপ্তাহের জন্য সব সংযম আবার রসাতলে!!!
কি করতে পারি?
আসলে এটা বন্ধ করতে হলে
একটা দুটা স্ট্রেটেজিতে সীমিত থাকলে হবে না
মাল্টিপল স্ট্রেটেজিতে প্রটেক্টেড থাকতে হবে
তাই মাইন্ডফুলনেস আর কেলুলেশনের পাশাপাশি যেটা করতে হবে
আপনাকে একটা স্ট্রং পেনাল্টি সিস্টেম ইন্ট্রোডিউস করতে হবে
ফর এক্সাম্পল
আজকে রাতে অশ্লীল কিছু দেখলেন
সাথে সাথে ১০ রাকাত নফল ও
আগামী কাল রোজা রেখে ফেলেন
এটা যদি করতে পারেন
দেখবেন সাজেশন গুলো সুর শুর করে কমে যাচ্ছে
আর লাস্টলি হলো
‘সমাগত’
এক থাকা যাবে না
কারণ খেয়াল করে দেখুন
সাজেশন গুলো আপনাকে তখনি সিডিউস করতে সক্ষম হয় যখন আপনি একা থাকেন
এই বিষয়ে আবারো হজরত ইউসুফ থেকে শিখতে পারি
তিনি কিন্তু রুমে চোখ বন্ধ করে একা থাকেন নি
রিয়ালাইসশনের সাথে সাথে
এব্র্যাপ্ট ডিসিশন নিয়েছিলেন
দরজার দিকে দৌড় দিয়েছিলেন
বলি কি
নেক্সট সাজেশন আসলে
আপনিও এব্র্যাপ্ট ডিসিশন নিন
লেপ্টপটা বন্ধ করে ফেলুন
ফোনটা সরিয়ে ফেলুন
রুমের দরজাটা খুলে দিন!
এতো দিনের জমানো আমল কেন ছুড়ে ফেলবেন?
অনেক তো হয়েছে
এবার নাফসের লাগামটা টেনে ধরুন!
Share: