যা সময়ের সাথে বেঁকে যায় না

শুত্রুবার!
কাহাফ টাইম
এন্ড এভরি টাইম এই সুরার প্রথম আয়াতটি পড়ি
সাথে সাথে একটি বই এর পাতা চোখের সামনে ভেসে উঠে
“দা হিডেন পারসুয়েডার”
১৯৫০ সালে জার্নালিস্ট ভেন্স পিকার্ড বোমা ফাটানো এই বইটি লিখেন
বইটিতে তিনি দেখান যে
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ইন্ডাস্ট্রি গুলো বিপুল পরিমাণের পণ্য উৎপাদন করার সক্ষমতা অর্জন করে
তবে সেই অনুপাতে তখনো মানুষ কনসিউম করছিল না
তখন মেডিসন এভিনিউর ব্যবসায়ীরা রীতিমতো রিসার্চ শুরু করে যে
কি ভাবে মানুষকে বেশি বেশি কনসিউম করানোর জন্য স্টিমুলেট করা যায়?
কি ভাবে মানুষের আনকোনশাস হ্যাবিটকে রি-ডাইরেক্ট করে
তার পারচেসিং বিহেভিয়ার কে মেনুপুলেট করা যায়
তিনি ভেঙে দেখান
কেন আমরা দুই থেকে তিন বছর পর পর নতুন ফোন কিনার জন্য এতো অস্থির হয়ে উঠি?
কেনই বা তা কিনতে না পারলে অনুশোচনা আর হীনমন্যতায় ভুগি
পুরো বইটি জুড়ে তিনি এক্সপোস করেন
একটি শক্তিশালী ইকোনমিক আইডিয়াকে
“দা কোনসুমেরিসম ইকোনমিক থিওরি”
অর্থাৎ
“বেশি বেশি ভোগ করো”
“বেশি বেশি কনসিউম করো”
তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে
তারা যে এটা করলো
কোন হাতিয়ার দ্বারা করলো
কি করে আমরা এই সেলফ ডিস্ট্রাক্টিভ আইডিয়াতে এমন নিবিড় ভাবে প্রভাবিত হলাম?
উত্তর হলো মিডিয়া!
অর্থাৎ টিভি, পেপার, বিলবোর্ড কিংবা মুভিস!
সমস্যা হলো
যারা এই মিডিয়াকে কন্ট্রোল করে
তারা বেশিরভাগই সেক্যুলার পন্থি।
অর্থাৎ যখনি কোনো এডভার্টাইসমেন্ট দেয়া হয়
তা দেয়া হয় সেক্যুলার দৃষ্টিকোণ থেকে
প্রশ্ন হচ্ছে সেক্যুলার পন্থি দৃষ্টি কোন বলতে কি বুঝায়?
বুঝায় তাদের বিস্বাস বা ফিলোসোফিকে:
তাদের বিশ্বাস হলো
“মানুষ ব্যক্তি হিসেবে নিজেই নিজের মোরাল স্ট্যান্ডার্ড নির্ণয়ে যথেষ্ট”
তার কোনো বহিরাগত ইনফ্লুয়েন্সের প্রয়োজন নেই
এমনকি স্রষ্টা কন্সপেটেরও প্রয়োজন নেই!
এই দর্শনের প্রধান সমস্যা হলো
এর কোনো এবসোলিউট রেফারেন্স পয়েন্ট নেই
সবই আপেক্ষিক !
আর আপেক্ষিকতার সমস্যা হলো
এটি সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল
যেমন:
আমার তো এখনো মনে পরে
৯০ এর দশকে স্ক্রিনে চুমুর দৃশ্য ছিল কেবল দুটো গোলাপের্ ঠুকাঠুকি
আর এখন?
অর্থাৎ যা ৯০ এর দশকে মোরালি আনএক্সেপ্টেড ছিল
তা এখন মোরালি এক্সেপ্টেড
এই দর্শনের আরো কিছু সমস্যা হলো
এর কোনো সলিড বাউন্ডারি নেই
যেমন সে বলে না
পর্নোগ্রাফি ভালো না খারাপ?
ব্যবসায় ধোঁকা দেয়া উচিত কি উচিত না?
মানুষের পিছনে কথা লাগাবেন কি লাগাবেন না?
বড় দেড় সম্মান করবেন কি করবেন না?
সমকামিতা করা যাবে কি যাবে না?
আর এখন তো এর সাথে যোগ হয়েছে
সোশ্যাল মিডিয়া
সবাই এখন সাংবাদিক
সবাই নতুন নতুন আইডিয়া ফ্লোট করে বেড়াচ্ছে
কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ বুঝব কি করে?
বুঝব কি করে যে কোন ইনফরমাসন ইনটেক করবো আর কোনটা বর্জন করবো
করলেও সেটা কার সাপেক্ষে করবো?
এবং এই প্রশ্নের উত্তরেই চলে আসে সেই প্রথম আয়াতটি [কুরআন ১৮:১]
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য
যিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি এই কিতাব নাজিল করেছেন
যাতে রাখেননি কোন বক্রতা “
এখানে বক্রতা বোঝাতে যেই শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হলো
“ইওয়াজা”
“ইওয়াজা” হচ্ছে সেই সব বস্তু যা এক সময় সোজা ছিল
তবে সময়ের বিবর্তনে আস্তে আস্তে সে বাঁকা হতে শুরু করে
যেমন কোনো গাছের ডাল কিংবা স্টিলের রড
অর্থাৎ তিনি এই কিতাবকে এমন ভাবে তৈরি করেছেন
যা সময়ের সাথে বেঁকে যায় না
তাইতো দেখবেন
পুরো কোরান জুড়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রিন্সিপালের কথা বলা হয়েছে
যেমন
নৈতিকতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, উদারতা, সত্যবাদিতা, মানবতা ইত্যাদি
কারণ এগুলো সময়ের সাথে বেঁকে যায় না!
আমরা এখন এমন একটা ফাস্ট পেস্ড সোসাইটিতে আছি
যেখানে ২০ বছর আগেও যা কল্পনা করা যেত না
আজ মিডিয়ার পাবলিসিটির কল্যাণে
লিটেরালি তা সেলিব্রেটেড হচ্ছে
এবং এস এ সোসাল বিং
আমরাও সেই স্রোতে গা ভাসাচ্ছি
প্রশ্ন তুলছি
“আচ্ছা বিষয়টা কি আসলেই এতো খারাপ?”
এই যখন স্রোতের অবস্থা
বলি কি
কুরআনকে ভাবুন একটি শক্তিশালী গাছের নেয়
যা আপনাকে এই স্রোত থেকে বাঁচিয়ে রাখবে
এর অর্থ এই নয় যে আপনি প্রেসার ফিল করবেন না
করবেন,
তবে আপনাকে খরস্রোতা এই ট্রেন্ডে ভেসে যেতে দিবে না
কারণ এটি হচ্ছে সেই রেফারেন্স পয়েন্ট
“যা সময়ের সাথে বেঁকে যায় না”!
Share: