হলিডে সিসন
বছরের এই সময়টা এখানে হলিডে সিসন
স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সবই বন্ধ
আকাশে বাতাসে আনন্দের ছোঁয়া
সেই আনন্দ ছুতে কিছুটা আমরাও একটু বের হলাম
ঝলমলে রাস্তা আর সারি সারি বিছানো কার্ট গুলো পাশ কাটিয়ে চলা বড়ই চ্যালেঞ্জিং
নানান কুসিনের গন্ধে মাতোয়ারা হতে আপনি বাধ্য
বিশেষ করে হট ডগ স্টান্ড গুলোতে
কি আর করা! অবাধ্য তো আর হওয়া যাবে না কারণ
এক দিকে হালালের চিন্তা অপরদিকে বয়কটের দৃঢ়তা
এখানে আসার পর খাবার অপশন একদমই লিমিটেড হয়ে গিয়েছে
কিছুটা আবদার করেই বললাম
আল্লাহ! এখানে আইসা কি কপালে হটডগ জুটবে না আমার?
বলতে দেরি, জবাব আসতে দেরি নেই
কার্ট এর পাশ থেকে এক জন সালাম দিয়ে বললেন
ভাই কেমন আছেন?
সালামের জবাব দিয়ে অবাক হয়েই বললাম
আলহামদুলিল্লাহ ভাই বেশ ভালো আছি, আপনি?
বুঝলাম তিনি আমাকে অন্য আরেকজনের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন
তাতে কি?
গল্প জুড়ে গেলো
গল্পে গল্পে জানলাম ভদ্রলোক পাকিস্তানি
তিনি নিজেই এই কার্টের মালিক
আমি বাংলাদেশি শুনে তো তার চোখ ছানাবড়া
ভাই ভাই ডেকে সেই কি হুলুস্থূল অবস্থা!
সাথে কি আফসোস!
আমাদের সাথে যা হয়েছে কতই না বাজে হয়েছে!
তারপর পলিটিশিয়ানদের এক হাত নিয়ে নিলেন
বললেন, আমরা মুসলমান ভাই ভাই! বাস!
কথায় কথায় জানলাম
এরকম কার্ট নাকি উনার আরো ৬টি আছে
অবাক হয়ে ভাবি
আকাশ চুম্বি সম্পদশালী মানুষটা
কি অস্বাভিক ভাবেই না মাটির সাথে মিশে আছেন
কথায় কথায় মজা করেই বললাম
ভাই, দেশে তো পুলিশকে কে হপ্তা দিতে হয়
এখানেও কি দিতে হয় নাকি?
জিভ কেটে বললেন
ছি ছি! পাগল নাকি!
অনেক শান্তিতে আছি ভাই
অনেক শান্তিতে
আফসোস করে বললেন
আসলে আমরা মুসলমানরা কুরআনের আদর্শ গুলো যখন ছেড়ে দিয়েছি
পশ্চিমারা সেই আদর্শগুলো আগলে নিয়েছে
এভাবেই তো তারা উপরে উঠেছে
দীর্ঘ ৪৫ মিনিট লাগিয়ে এরকম আরো অনেক গল্প হলো
এক পর্যায়ে গন্ধে থাকতে না পেরে বললাম
আচ্ছা আসে পাশে কি হালাল হটডগ পাওয়া যায় কোনো?
পাওয়া যায় মানে!
অবশ্যই পাওয়া যায়!
এখনই নিয়ে আসছি!
হাজার নিষেধ সত্ত্বেও
নিজেই দৌড়ে গেলেন কার্টের ভিতরে
বাবুর্চিকে সরিয়ে নিজ হাতে বিভিন্ন সস দিয়ে মমতা মাখিয়ে বানালেন একটা রসালো হটডগ
আর তার থেকেও এম্বেরেসিং বিষয়
কিছুতেই কোনো টাকা রাখলেন না
বললেন
ভাই এর কাছে ভাই খেয়েছে এখানে আবার টাকা কিসের!
চোখের পানি কোনো ভাবে লুকিয়ে বিদায় নিতে নিতে ভাবলাম
কি চুম্বক গতিতেই না তিনি দুয়ার সাড়া দিয়ে থাকেন
মনে মনে কেবল আর্জি করলাম মাত্র
আর অমনি ব্যবস্থা করলেন
এমন দিক থেকে করলেন যা কখনো কল্পনাও করিনি
নাহ! আই সারেন্ডার!
তাঁর প্লেন বুঝা বড় দায়
আজ অবধি বুঝিনি
ভবিষ্যতেও বুঝবো বলে মনে হয় না!
Leave a Comment