তারা কেন অহেতুক দুবছর পিছিয়ে থাকবে?
ছোটবেলা পড়া লিখার কোনো চাপই ছিল না
যেখানে সমবয়সীরা পিঠে বেগ চড়িয়ে স্কুলে যেত
তখন আমি বাসার পিছনে সাত চারা খেলায় ব্যস্ত
লোকে খারাপ বলবে ভেবে এক পর্যায়ে আম্মা ভর্তি করিয়েই দিলেন
ভর্তি হলাম আশকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
প্লে নার্সারি কেজি ১ কেজি ২ কিংবা ১ এর কোনো বালাই নেই
বয়স ভিত্তিক ভাবে ডিরেক্ট টুতে
পরের বছর থ্রি তে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ট্রান্সফার হলাম আশকোনা কনকর্ড কিন্ডার গার্টেনে
সেখানেও খুব একটা থাকার সুযোগ হলো না
আব্বার ট্রান্সফার হলো সিঙ্গাপুরে
সপরিবার নিয়ে গেলেন সেখানে
সেখানে কোনো স্কুল নাই
তাই সেখানেও সারা দিন টই টই করে বেড়াই
আর পরীক্ষার সময় এসে কনকর্ডে পরীক্ষা দেই
এই করতে করতে উঠলাম সিক্সে
সিঙ্গাপুর থেকে আব্বুর ট্রান্সফার হলো ইন্ডিয়াতে
আর সেখানে থেকেই যত অধঃপতন শুরু
আমাকে ভর্তি করানো হলো এক ক্লাস ডিমোশন দিয়ে
অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণীতে
কিছুদিন পর আবার আব্বুর ট্রান্সফার হলো বাংলাদেশে
এসে ভর্তি হলাম হোলি চাইল্ডে ওই ফাইভেই
হোলি চাইল্ড কেবল স্টার্ট করছে
ফাইভে আমি তখন এক মাত্র ছাত্র
বিষয়টা ভালো দেখায় না
ক্লাস ফোরে তখন অনেক স্টুডেন্ট
তাই জন স্বার্থে আমাকে দিলো আরেকবার ডিমোশন,
এবার ক্লাস ফোরে
লজ্জায় আমার মাথা হেঁট
বলা চলে ক্লাস ফাইফ আমি মোটামুটি ৩ বার পড়ে ফেলেছি
বিষয়টা আমার চোখে ক্ষমার অযোগ্য
কারণ দু তিন বছর আগে বের হলে হয়ত প্রেক্ষাপট আরো ভিন্ন হতে পারতো
এর ইম্প্যাক্ট সব থেকে ফেস করেছি চাকরি জীবনে
তবে লাইফের নিজস্ব একটা প্লেন থাকে
যাই হোক
আজকের প্রসঙ্গ আমাকে নিয়ে নয়,
আজকের প্রসঙ্গ ভিন্ন
ফাস্ট ফরওয়ার্ড কয়েক যুগ
ছেলে হলো
ছেলে বড় হতে থাকলো
মনে মনে সংকল্প
আমার সাথে যা হয়েছে তার সাথে যেন না হয়
আর্লি স্কুলে দিতে দেই নি
তাই তার মা চিন্তায় অর্ধ মৃত
তার বয়সী বাচ্চারা নাকি সব স্কুলে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে
ছেলে গোন্ড মূর্খ হয়ে উঠছে
কোনো রকমে দু বছর ঠেকালাম
ইচ্ছে হলো ইয়ার লস না করিয়ে ডিরেক্ট ওয়ানে ভর্তি করাই
কিন্তু কর্তৃপক্ষ নারাজ
চোখ কপালে তুলে বললো
সেটা করা যাবে না
কারণ, সে পারবে না
সংকল্প ধরে রাখতে পারিনি
দু বছর ডিমোশন দিয়ে তাকে ভর্তি করলো নার্সারিতে
নার্সারি শেষে কেজি ওয়ানে উঠলো
কেজি ওয়ান শেষে কেজি ২ তে
তারপর এখানে চলে আসা
এবং এখানে এসে যখন ভাবছি
“ওর কপালেও কি আমার মতো ডিমোশনই থাকবে?”
কর্তৃপক্ষ তখন অবাক করে জানালো
নাতো!
সেতো সেভেন
সে যাবে ক্লাস টু তে!
কারণ এখানে নাকি শ্রেণি নির্ধারণ হয় বয়স ভিত্তিক ভাবে
এবার চোখ আমার কপালে তুলার পালা!
বলে কি!
বললাম বাহ্!
আমি যেখানে দু বছর ডিমোশন
তোর দেখি এখানে দু বছর প্রমোশন!
ভাবছি আমার দেশে এটা শুরু করা যায় না?
ভাবছি ওর সহপাঠীদের কথা
ভাবছি তাদের দোষ কোথায়?
তারা কেন অহেতুক দুবছর পিছিয়ে থাকবে?
আমার সন্তান যখন পড়া লিখা শেষ করে চাকরিতে ঢুকবে
তারা তার সহপাঠীরা তখনো প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বর্ষে
কেন?
কেন তারা ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশনে দু বছর পিছিয়ে থাকবে?
কেন আমাদের বাচ্চাদের সময় নষ্ট করা হচ্ছে?
কেন আমার দেশের বাচ্চারা দু বছর পরে স্কুল থেকে বের হতে হবে?
নার্সারি কেজি ১ কেজি ২ তে পড়িয়ে তারা কোন বিদ্যাসাগর প্রডিউস করার চেষ্টা করছে?
বিষয়টা কি তাহলে শুধুই ব্যবসায়িক?
যদি তাই হয়ে থাকে
তাহলে সময় এসেছে নতুন সচেতনতার
“ইংলিশ মিডিয়াম” কিংবা “বাংলা”
“প্রাইভেট” কিংবা “সরকারি “
সবখানে ভর্তি হোক বয়স অনুপাতে
এটা হোক সময়ের দাবি!!!
Leave a Comment