ওয়াসওয়াসা একচুয়েলি কি?

আবরার এসে বলছে
আব্বা জানো আমি না আজকে আল্লাহকে ওয়াসওয়াসা দিয়েছি
আমি ঘামছি!
ইন্নালিল্লাহ!
ছেলে বলে কি আমার!
কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করি
কি বলো আব্বা!
কি ভাবে!
তুমি না বললে সেইদিন সূরা নাসে
ওয়াসওয়াসা অর্থ ফিসফাস করা?
উঁহুঁ
আমি আজ সেজদায় ফিসফিস করে আল্লাহর কাছে চেয়েছি!
সোঁ ওয়াসওয়াসা দেয়া হলো না?
হেসে ঘাম মুছতে মুছতে বললাম
আরে বোকা! ওয়াসওয়াসা মানে এটা না?
তাহলে?
আর তখনই মনে হলো
আরে! এই প্রশ্নটা তো একসময় আমারও ছিল
ইনফেক্ট প্রশ্নটা মনে হয় আমাদের অনেকেরই আছে
ওয়াসওয়াসা একচুয়েলি কি?
ওয়াসওয়াসার কনসেপ্ট তো আমরা কম বেশি সবাই শুনেছি
তবে সামহাও এর ইম্পেক্ট কখনো খেয়াল করিনি হয়তো
কখনো কি এমন হয়েছে
পছন্দের একটা গান শুনছেন
অথচ খেয়ালি করেননি কখন গানটা শেষ হয়ে গেলো
অথবা ড্রাইভ করছেন
কিন্তু খেয়ালি করেন নি
কোন সময় টার্ন নেয়ার গলিটা পিছনে ফেলে এসেছেন
অথবা বাসে বসে আছেন
সামনেই স্টপেজ
খেয়াল করেন নি
আপনার নামার স্টপেজ ফেলে এসেছেন সেই আরো ১০ মিনিট আগে?
আবার ধরুন
বাসার অতীব জরুরি জিনিসটা হাজার মনে করে দেয়া সত্ত্বেও
কি করে যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছেন
কেন?
কারণ আপনি তখন অন্যমনস্ক ছিলেন
এর অর্থ কি?
অর্থ হলো আপনি তখন অন্য চিন্তায় বিভোর ছিলেন
ইফেক্ট বেশির ভাগ মানুষই আমরা এই অন্য চিন্তায় বিভোর থাকি
নাভাডা এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির দুই বিজ্ঞানী
ডা. রাসেল হার্লবার্ট এবং ডা. এরিক সুইৎজজেবেল
২০০৭ এ একটি জার্নাল বের করে দেখান
দৈনিক আমরা অন্তত ৬২০০ টি চিন্তায় মগ্ন থাকি
এবং আমাদের এই চিন্তাগুলো শুরু হয় প্রম্পটের মাধ্যমে
যখনি সামনে কোনো একটি ইন্সিডেন্ট ঘটে
বাস শুরু হয়ে যায় দিবা স্বপ্ন
সেই স্বপ্ন থেকে আরেকটা স্বপ্ন
সেটা থেকে আরেকটা
স্বপ্ন শেষ হতে না হতে আরেকটা প্রম্প্ট
বাস শুরু হয়ে যায় আবার স্বপ্ন
এ যেন এক ইনফিনিটি লুপ
কোনো এক অদৃশ্য সাথি যেন একের পর এক উস্কানি মূলক প্রম্পট দিয়েই যাচ্ছে
আর আমরাও সেই প্রম্পটের কারণে নানান চিন্তায় মগ্ন
স্রষ্টা জানিয়েছেন আমাদের সেই অদৃশ্য সাথি হলো
“কারিন” নামক এক জীন
সে জন্ম থেকেই আছে আমাদের সাথে আছে
এবং এই কারিনই অনবরত ভাবে আমাদেরকে বিরতিহীন ভাবে প্রমোট দিয়ে যাচ্ছে
রাসুলুল্লাহ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল
ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার সাথেও কি এই কারিন আছে
তিনি বলেছিলেন,
হ্যা ,আমার সাথেওঁ আছে
তবে আল্লাহর সাহায্যে সে এখন মুসলিম
সে অবশ্য এখন আর আমাকে খারাপ কিছুর প্রমট দেয় না
কারিনের এই প্রোমট গুলো হলো
ইন্টারনাল মনোলোগের মত
না পারবেন তাকে চুপ করাতে
না পারবেন একে শেষ করতে…
সকালে থেকে শুরু
রাত অব্দি সে বকবক করেই যাচ্ছে
এ এক আনএভোইডেবল যন্ত্রণা
কিছু প্রম্পটের এক্সাম্পল দিচ্ছি
সকালে ফিটফাট হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালেন
সাথে সাথে প্রম্পট
“ওহ আজ তো তোমায় জোস্স্ দেখাচ্ছে,”
কোনো ই-মেইল অ্যাটাচমেন্ট ছাড়া ছেড়ে দিলেন
সাথে সাথে প্রম্পট
“তুই একটা আস্ত রাম ছাগল
তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না”
কিংবা অফিসের এক কলিগকে দেখে প্রম্পট
“দেখনা! নেকাটা কেমনে মাথা দুলিয়ে বসের সস্তা জোকে হেসে যাচ্ছে,
বাটপাড়, সব সময় খালি তেলবাজি”
আবার কখনো প্রম্পট
“দেখেছিস! বেটা কি স্মুথলি কথা বলে যাচ্ছে,
তুই জীবনেও এমন হতে পারবি না,
ওর প্রমোশন হবে না কি তোর হবে? ”
এ যেন এক বিরামহীন বাঁদর
লাফিয়ে বেড়াচ্ছে এক গাছ থেকে আরেক গাছে
এতো গেলো সামান্য কিছু উদাহরণ,
চিন্তা করুন সারাদিন এমন ৬০০০ বকবকানি আমাদের সহ্য করতে হয়
নো ওয়ান্ডার আমরা কেন এতো স্ট্রেসড থাকি
ফিলোসোফি কিংবা সাইকোলোজিস্টরা এই প্রম্পটগুলোর নাম দিয়েছে
“মেন্টাল চেটার” হিসেবে
আর আমরা জানি
কারিনের দেয়া এই প্রম্পটগুলোই হচ্ছে
“ওয়াসওয়াসা”
এই মেন্টাল চ্যাটার বা ওয়াসওয়াসাকে বশ করা একটা টুল আছে
টুলটি হলো “আওয়ার্নেস”
আমরা যখন “কনসিয়াসলি আওয়ার” থেকে এই চিন্তা গুলোকে অবজার্ভ করি
এবং কনসিয়াসলি মেন্টাল চ্যাটার কে একটিভ্লি প্রশ্ন করি
থটস গুলো একটা ধুয়ার মতো গায়েব হয়ে যায়
অলমোস্ট ম্যাজিকালি
এখনই ট্রাই করে দেখতে পারেন
নিজেকে এই মুহূর্তে প্রশ্ন করেন
“আচ্ছা এখন আমি কি চিন্তা করছি?”
“আচ্ছা আমার নেক্সট চিন্তাটা কি হবে?”
দেখবেন আপনি কোনো কিছু আর চিন্তা করতে পারছেন না
এবং হঠাৎ প্রেজেন্ট মোমেন্টে চলে এসেছেন
কয়েকদিন এই অ্যাওয়ারনেস প্রশ্নটি প্র্যাক্টিস করুন
আস্তে আস্তে প্রোমট গুলো ধরা সহজ হয়ে পরবে
মনে রাখবেন
আপনি হচ্ছেন একজন অবজার্ভার
যেই চিন্তায় আসুক না কেন তাকে জাজ করবেন না
সিম্পলি অব্জার্ভ করবেন
আমাদের দীনে এই কনস্ট্যান্ট অ্যাওয়ারনেস থাকাটার একটা টার্ম আছে
টার্মটি হলো
“তাকওয়া”
এবং যারাই কনস্ট্যান্টলি এই তাকওয়া স্টেটে থাকে
তাদেরকে আমরা বলি
“মুত্তাকী”
চমৎকার এই শব্দটির ট্রান্সলেশন অবশ্য আমরা বানিয়ে ফেলেছি
ভয় হিসেবে!
তাফসিরের পাতায় বলেন অথবা ডাইরেক্ট অনুবাদ গুলোতে বলেন
সবখানেই লিখা
আল্লাহকে ভয় করো!
এই তাকওয়া শব্দটি বিভিন্ন ফর্মেশনে ২৫৮ বার পেয়েছি কুরআনে
যেমন
লা আল্লাকুম তাত্তাকুন [যেন তোমরা আল্লাহকে ভয় করো]
ওয়াত্তাকুল্লাহ [এবং আল্লাহকে ভয় করো]
ফাত্তাকু [অতএব আল্লাহকে ভয় করো]
মুত্তাকিন [খোদা ভীরু হও]
ভয়! ভয়! ভয়!
মাথায় গেথে গিয়েছে
আল্লাহ ভীতিকর, তাকে ভয় পেতে হবে
অথচ ভাষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে শিখলাম
ভয়ের জন্য কোরানে ব্যবহার হয়েছে
“খাউফ” কিংবা “খাসিয়া” শব্দটি
তাকওয়া শব্দের সব থেকে কাছের অর্থ বুঝলাম
“আওয়ারেনেস”
অর্থাৎ চিন্তার ধুয়াজালে না ভেসে
অন্যমনস্ক না হয়ে
সর্ব অবস্থায় প্রেজেন্ট থাকলে
আমরা আওয়ার হয়ে টের পেতে পারি যে
কেউ একজন এই মুহূর্তে আমাদের দেখছে
এই ইনফরমড আওয়ারেনেসটিই হচ্ছে
“তাকওয়া”
এখন লক্ষ করুন
আমরা যদি এই ভয় শব্দটি সিম্পলি আওয়ারেনেস দ্বারা রিপ্লেসে করে দেই
তাহলে কি দাঁড়ায়
লা আল্লাকুম তাত্তাকুন [যাতে তোমরা আল্লাহর সম্পর্কে এওয়ার হতে পারো]
ওয়াত্তাকুল্লাহ [আল্লাহর সম্পর্কে এওয়ার হও]
ফাত্তাকুল্লাহ [অতএব আল্লাহর বিষয়ে এওয়ার হও]
মুত্তাকিন [যে সবসময় এওয়ার থাকে, সেরকম হও]
পুরো মিনিংই চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে….
এখন অবশ্য আরেকটি প্রম্প্ট পেলাম
এখন তো রমজান মাস
তারপরেও কেন আমরা এখনো প্রোমট ফিল করছি
শয়তানকে না শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে?
উত্তর হাদিস শরিফে পেলাম
রমজান এসেছে মানেই সব শয়তান কিন্তু শিকলবন্দি নয়
অনলি ইবলিস এবং লিডারশিপ রোলে যারা আছে
তারাই শুধু শিকল বন্দি
অর্থাৎ আমাদের কারিন এখনো আমাদের সাথেই আছে
এবং সে এখনো দিব্বি ওয়াসওয়াসা দিয়ে যাচ্ছে
এই জন্য এখনো আজেবাজে চিন্তা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে
আর এ কারণেই হয়তো
নামাজের প্রথম রাকাতে কোন সূরা পড়েছিলাম ভুলে যাচ্ছি
মনে রাখবেন
যত দিন এই অন্যমনস্ক অবস্থায় থাকবেন
আপনার সফলতা হওয়ার পথ ততটাই বিলম্বিত
কারণ সফলতার যত স্পিরিচুয়াল বই পড়েছি
সবখানেই একটা কথা পেয়েছি
সাকসেফুল হতে হলে আওয়ারেন্স ডেভেলপ করতে হবে
প্রেসেন্ট থাকতে হবে
স্রষ্টাও কিন্তু চান আমরা যেন সাকসেফুল হতে পারি
আর এই জন্যই তো তিনি বার বার মুত্তাকী হতে বলেছেন
তাহলে প্রশ্ন আসে না
মুত্তাকী হব কি করে?
দেশে তো আর কোনো তাকওয়া ভেক্সিন পাওয়া যায় না
যে ৩ বার পুশ করলাম বাস মুত্তাকী হয়ে গেলাম!
বিষয়টা তিনিও জানেন
যে আমাদেরকে বলে কয়ে মুত্তাকী বানানো যাবে না
তাইতো তিন ঘাড়ে ধরে এক্সারসাইজ ধরিয়ে দিয়েছেন
“রোজা”
তিনি রোজাকে বাধ্যতামূলক করেছেন
এবং বলেছেন
“হে বিশাসীগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরজ করা হয়েছে, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার”
কেন?
কারণ যখনই কারিন রোজা অবস্থায় আমাদেরকে খারাপ প্রম্প্ট দেয়
তখনি আমরা সেটা রিয়ালাইস করতে পারি এবং
এফোর্ট দিয়ে রেসিস্ট করতে পারি
এই বলে যে
“না আমি রোজাদার, এটা করা যাবে না, আল্লাহ দেখছেন”
এই যে এওয়ার্নেসটা
“না আমি রোজা, করা যাবে না! আল্লাহ দেখছেন!”
এটাই কিন্তু আওয়ের হওয়ার ফার্স্ট স্টেপ
তাই আমার মনে হয়
এই রমজানে আমরা একটা জিনিস বেশি বেশি চাইতে পারি
আর তা হলো
“হে আল্লাহ!
আপনি আমাদের কারিনকে মুসলিম বানিয়ে দিন
যেন সে আমাদেরকে ওয়াসওয়াসা দেয়া বন্ধ করে দেয়
সেই সাথে
হে আল্লাহ!
আপনি আমাদেরকে মুত্তাকী বানিয়ে দিন
যেন আমরা আপনার প্রেসেন্স
সর্ব অবস্থায় ফিল করতে পারি!!!”
Share: